শুঁটকি ব্যবসায় দারিদ্র্য ঘুচিয়ে মিরা রানী এখন সফল উদ্যোক্তা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর এলাকাটি নদী,খাল, বিলবেষ্টিত। এখানকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস মাছ চাষ, ছোট খাটো ব্যবসা ও কৃষি অন্যতম। লালপুরের কান্দাপাড়া বসবাস করে শতাধিক জেলে পরিবার। মাছ ধরে বিক্রি করেই চলে এসব পরিবার। তবে বর্তমানে এসব পরিবারের অনেকেই পুঁটি মাছের সিদল/ চেপা শুঁটকি তৈরি ও বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। হ্যাঁ তাদেরই একজন মিরা রানী।
মিরা রানীর যখন বিয়ে হয় তখন তার স্বামী নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে খুব কষ্টে সংসার চালাতেন। অভাব-অনটনের সংসার ছিল। স্বামী বিকাশ দাসের পক্ষে কিছুতেই পরিবারের অভাব অনটন থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। দিন দিন পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৫ মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য ৭ জন। আয়ের একটি বাড়তি পথ খুঁজতে খুঁজতে এক সময় মিরা রানীর স্বামী মাছ ধরে বিক্রির পাশাপাশী মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে স্থানীয় বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করতে থাকেন। দিনদিন এতে ভালো লাভ হতে থাকে । তখন মিরা রানীর স্বামী বিকাশ দাস ভাবতে থাকেন শুঁটকির ব্যবসাটাকে কীভাবে আরও বড় করা যায়! বিষয়টি নিয়ে মিরা রানীর সাথে আলাপ করেন। আলোচনা করে দুজনেই ঠিক করেন শুঁটকি ব্যবসাটা আরো বড় করবেন। কিন্তু  অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছিল না। অগত্যা মিরা রানী তার কিছু সোনার অলঙ্কার বিক্রি করে ১ লাখ টাকা দিয়ে পুঁটি মাছ কিনে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করতে থাকেন। এভাবে চলতে থাকে মিরা রানী ও বিকাশ দাসের সংসার। 


শুঁটকি থেকে আয় বাড়তে থাকায় তাদের এ ব্যবসা আরো বড় করে তোলার ইচ্ছেটাও বাড়তে থাকে। তারা স্বপ্ন দেখেন ব্যবসাটাকে আরও বড় করার এবং পাশাপাশি একটি আড়ত খুলবেন। এমন অবস্থায় ২০১৭ সালে তাদের আলাপ হয় সিদীপ-এর একজন কর্মীর সাথে। বিকাশ দাস তার স¦প্নের কথা কর্মীকে জানালে সেই কর্মী তাকে জানিয়েছিলেন, সিদীপ তাকে এ ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা দিতে পারে। তার পরামর্শক্রমে মিরা রানী সিদীপের সেখানকার একটি মহিলা সমিতিতে যোগ দেন এবং ঋণের আবেদন করেন। যাচাই শেষে তার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে ২০১৭ সালের ৬ জুন তাকে ৪৮,০০০ টাকা ঋণ দেয়া হয়। এই টাকা দিয়ে পুঁটি মাছ কিনে সেগুলো কুটিয়ে মাচা/ডাংগির মধ্যে শুকিয়ে মাটির মটকিতে ভরে গুদামজাত করেন। এভাবে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে এবং এই দম্পতি নিজেদের পরিবারের পাশাপাশি তাদের আড়তে কর্মরত ৮-১০ জন কর্মচারীর পরিবারের দায়িত্ব নেয়। এভাবে এক বছর কাটার পর ২০১৮ সালে মিরা রানী সিদীপ থেকে আরো ১,৫০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে তা ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার পরিধি এবং লোকবল বাড়তে থাকে। এরপর মিরা রানী ২টি শুঁটকির আড়তের মালিক হন এবং ২০ জন কর্মচারী নিয়োগ করেন।  


এভাবে ধীরে ধীরে মিরা রানী ও বিকাস দাসের শুঁটকির ব্যবসা বাড়ছে। তাদের শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় তারা   উৎপাদন আরো বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করেন। কিন্তু তাদের কাছে যে পরিমাণ অর্থ ছিল তাতে উৎপাদন সেভাবে বাড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। অগত্যা তারা আবারো সিদীপের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সিদীপ বরাবরের মতো তাদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের ৩,০০,০০ টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করে। এই টাকা দিয়ে তারা পুঁটি মাছের পাশাপাশি লইট্যা, পোয়া, বাইন ইত্যাদি মাছ কিনে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করতে থাকেন এবং তাদের আয় বেশ বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাদের ব্যবসায় ৫০ লাখ টাকার পুঁজি রয়েছে। এখন প্রতি মাসে তাদের মাসিক আয় গড়ে ২ লাখ টাকা। শুঁটকি ব্যবসায় দারিদ্য ঘুচিয়ে এভাবেই এখন একজন সফল উদ্যোক্তা।